ইঞ্জেকশন কি ও কি ভাবে দিবেন ইঞ্জেকশন কি দিতেই হবে II Injection - suexpress

Header Ads

ইঞ্জেকশন কি ও কি ভাবে দিবেন ইঞ্জেকশন কি দিতেই হবে II Injection


ইঞ্জেকশন

শান্তিময় সংপতি

ইঞ্জেকশন,Injection

ইঞ্জেকশন

এখন সহ্যক্ষমতা অনেকটা বাড়লেও ছােটো থেকেই আমি যন্ত্রণায় বেশ কাতর হতাম তা নিজের বা অন্যের হােক।
আমাদের যিনি পারিবারিক চিকিৎসক (MBBS, DGO) ছিলেন তিনি প্রায় প্রত্যেক রােগীকেই একটা করে ইঞ্জেকশন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতেন।
তার কম্পাউন্ডার পাত কুয়াের জলে কাচের সিরিঞ্জ ও ছুঁচ ধুয়ে রাখতেন ব্যবহারের পর।
সম্ভবত ফোটানাের বালাই ছিল না।
খুব ছােটোবেলায় মাঠ থেকে ধান আনতে গিয়ে মােষের গাড়ির ডগায় বাঁ-হাতের অনামিকা ঘেঁৎলে ফেটে গিয়েছিল।
বাড়িতে ডেটলতুলাে দিয়ে আঙুলটা বাবা বেঁধে দিয়েছিলেন।
বাবার অজ্ঞতার মাশুল আমাকে কড়ায়-গন্ডায় গুনতে হয়েছিল পরদিন ডাক্তারখানায় গিয়ে।
কম্পাউন্ডারের অজ্ঞতায় যন্ত্রণাদগ্ধ ড্রেসিংয়ের পর ইঞ্জেকশনের ভয়ে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলােম।
ডাক্তার বেরিয়ে হাতের কাগজ দেখিয়ে বলেছিলেন,
ইঞ্জেকশন না নিলে এই ওষুধটা কিনে নিয়ে আয়।
কাছে গিয়ে কাগজ নিয়ে যেই পিছু ঘুরেছি অমনি বিশ্বাসঘাতক ডাক্তার আমায় জাপটে ধরে ভিতরে নিয়ে গিয়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে দিলেন।
এরপর একেবারে ২৩ বছর বয়সের কথা, যখন জন্মগত দুটো সমস্যার কারণে আমি শল্যচিকিৎসার শরণাপন্ন হলাম।
অস্ত্রোপচারের পর এগারাে দিনের মাথায় জ্বর এল।
ফলে Gentamicin IM নিতে হয়েছিল দুই বাহুতে।
বেশ কয়েক মাস সেই ব্যথা বর্তমান ছিল।
অথচ অন্যান্য রােগীরা যখন ড্রেসিংয়ের সময় চিৎকার করতেন তখন বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করতাম যে শরীরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর অংশে ড্রেসিংয়ের শুরু এবং শেষ টেরই পেতাম না।
ইঞ্জেকশনের পুরাে কোর্স আমার ইঞ্জেকশন ভীতি দূর করে দিল।
একজন গ্রামীণ চিকিৎসক (একাধারে গবাদি পশু, পাখি এবং মানুষ) এর উৎসাহে বােনকে প্রথম IM ইঞ্জেকশন দিলাম গত শতকের অন্তিম দশকের শুরুর দিকে।
এরপর “ধাত্রীর ধরিত্রী” পড়ে এ বিষয়ে পুঁথিগতবিদ্যা আয়ত্ত করলাম।
ওই দশকেরই শেষ দিকে IV দেওয়াও শুরু করি একরকম বাধ্য হয়ে এবং ডাক্তারের উৎসাহে।
‘শ্রমিক কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্যকেন্দ্র-এ স্বাস্থ্যকর্মীদের পড়াতে গিয়ে দেখেছি যারা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহারিক কাজগুলো সম্পন্ন করে চলেছেন তারা পুঁথিগত জ্ঞানে পিছিয়ে আছেন।
সেই অভাব পূরণের লক্ষ্যে তাদের যা বলেছি সেটাই এখানে লিপিবদ্ধ করলাম।
বলা বাহুল্য এ জ্ঞান বিভিন্ন বই পড়ে অর্জন করেছি।
সংগৃহীত তথ্যগুলােকে অনুবাদ এবং একজায়গায় সাজানাে ছাড়া আর কোনাে কৃতিত্ব আমার নেই।
ওষুধের রকম ঃ-
  1. বড়ি (Tablet),
  2. ক্যাপসুল,
  3. মিশ্রণ (Syrup),
  4. তরল (Drop),
  5. গুঁড়াে (Powder),
  6. মলম (অয়েন্টমেন্ট),
  7. ক্রিম,
  8. জেল,
  9. জেলি।

ওষুধ গ্রহণের পথ :
  1. মুখ (খাদ্যনালী),
  2. মুখ (শ্বাসনালী) ,
  3. জিভের তলা (শিরা দিয়ে রক্তে),
  4. চোখ,
  5. নাক,
  6. কান,
  7. পায়ু (Suppository),
  8. যােনি (Suppository),
  9. চামড়ার উপর (Emulsion), চামড়ার মধ্যে, চামড়ার নিচে,
  10. মাংসপেশিতে,
  11. শিরার মধ্যে,
  12. হাড়ের মধ্যে,
  13. অস্থিসন্ধিতে

ইঞ্জেকশন :- শরীরের স্বাভাবিক ছিদ্রপথ ছাড়া অন্য কোন স্থান দিয়ে পা ছুঁচ ও সিরিঞ্জের সাহায্যে শরীরের মধ্যে কোনাে তরল ওষুধ ঢােকালে তাকে ইঞ্জেকশন বলে।
শরীরের ভিতর থেকে কোনাে তরল সংগ্রহ করতে অথবা বের করতেও ছুঁচ-সিরিঞ্জ প্রয়ােজন হয়।
যে ব্যক্তি খেতে পারবেন তাকে ইঞ্জেকশন দিবার কথা ভাববাে না।
কারণ এটা ব্যয়বহুল, যন্ত্রণাদায়ক, সংক্রমণ সম্ভাবনাযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্য নির্ভর।
যে ওষুধ কেবলমাত্র ইঞ্জেকশনরূপেই পাওয়া যায় (Tetanus toxoid, BCG vaccine, AVS), যিনি ক্রমাগত বমি করছেন, যে ওষুধ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে দিতে হবে (Frustrated, Atropine, Adrenaline), যে ওষুধ স্থানীয়ভাবে প্রয়ােগ করতে হবে (Lignacine) সে সকল ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশন ছাড়া গত্যন্তর নেই।
আবার রিউম্যাটিক জ্বরের ক্ষেত্রে প্রতিরােধমূলক ব্যবস্থায় যেখানে দীর্ঘদিন (৫ বছর বা সারাজীবন) ওষুধ নিতে হয় সেখানে ইঞ্জেকশন ও খাবার ওষুধ দু’রকম ব্যবস্থাই আছে।
যন্ত্রণাদায়ক বেনজাথিন পেনিসিলিন (৯০০ মিগ্রা) ২১ দিন ছাড়া নিতে ১৭.৫০টা খরচ পড়ে।
আর বিকল্প ওষুধ পেনিসিলিন ভি (দৈনিক ২৫০০ মি.গ্রা. ২ বার) বা এরিথ্রোমাইসিন (২৫০ মি.গ্রা. ২ বার) দৈনিক খরচ অনেক বেশি, একদিকে ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া, বেশি খরচ আর অন্যদিকে ২১ দিন ছাড়া যন্ত্রণা, কম খরচ।
পছন্দ নিজের নিজের।
ইঞ্জেকশনের রকম ঃ- চামড়ার দুটো স্তরের মাঝখানে intra-cuteneous / intradermal), STS, FAICO (SC – sub-cutaneous), STET CO (IM-intramuscular), (IV-intravenous), হাড়ের মধ্যে (intra-osseous), দুটো হাড়ের সংযােগস্থলে (intraarticular), মেরুদন্ডের মধ্যে (intra-spinal) ইত্যাদি।
আর শরীর থেকে তরল সংগ্রহ করতে বা বের করে দিতে কয়েক জায়গায় ছুঁচ ঢােকাতে হয়।
যেমন ধমনীর ভিতর, দুই পুরার মধ্যবর্তী স্থানে, মূত্রথলিতে।
ইঞ্জেকশনযােগ্য ওষুধপত্র :- কাচের তৈরি একমাত্রার তরল ওষুধ যে ঢাকনাবিহীন পাত্রে থাকে তাকে অ্যাম্পুল (ampoule) বলে।
আর কাচের তৈরি রবারের ঢাকনাযুক্ত এক বা বহুমাত্রার তরল বা গুঁড়াে ওষুধ যে পাত্রে থাকে তাকে ভায়াল (vial) বলে।
সিরিঞ্জ ও নিডিল এদের সাহায্যেই ওষুধ শরীরের ভিতর ঢােকানাে এবং শরীর থেকে কোনাে তরল বেরকরা যায়।
এদের প্রত্যেকের তিনটা করে অংশ।
তির্যকভাবে কাটা ছুঁচের ডগার অংশকে বিতৈল (beve) ; বিভেলের পরবর্তী লম্বা অংশকে ম্যাফট (shaft) এৰং স্যাফটের পরবর্তী হঠাৎ মোটা হয়ে যাওয়া অংশকে হাব (hub) বলে।
ছুঁচের হাৰ অংশটা সিরিজের যে সরু অংশটার সঙ্গে যুক্ত থাকে তাকে নজল (nozzle) বলে।
নজলের পরবর্তী মােটা পা অংশটাকে ব্যারেল (barrel) বলে।
ব্যারেলের মধ্যেই তরল জমা হয় এবং এর বাইরের অংশে আয়তন মাক ৰাগ চিহ্নিত থাকে।
ব্যারেলের ভিতর থেকে বাইরে পর্যন্ত যে অংশটা থাকে তাকে প্লঞ্জার (plunger) বা পিস্টন (piston) বলে।
পিস্টনের সাহায্যেই কোনাে তরল বারেলের মধ্যে ঢােকানাে এবং বের করা সম্ভব হয়।
এখানে যে ছুঁচের কথা বললাম তা হল ফাপা (hollow), এছাড়াও আর একরকমের সুঁচ (suture needle) যা সেলাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়।
সিরিঞ্জ ও নিডিলের আকার :- কতটা তরল দেওয়ানেওয়া করতে হবে তার ভিত্তিতেই বিভিন্ন আয়তন অংশঙ্কিত সিরিঞ্জ নির্বাচন করতে হয়।
এছাড়াও দেহের কোন অংশে এবং কি কাজের জন্য ব্যবহার হবে তার ভিত্তিতেও বিভিন্ন গঠনের (নজল মাঝে, নজল পাশে, লক-হেড) সিরিঞ্জ নির্বাচনে কাজের সুবিধা হয়।
মি.লি, লিটার ও এর ক্ষুদ্রাংশে চিহ্নিত সিরিঞ্জ পাওয়া যায়।
উদা-ইনসুলিন নেবার জন্য যে সিরিঞ্জ পাওয়া যায় তাতে ১ মি.লি, কে চল্লিশ ভাগে বিভক্ত করা যায়।
মান্টু (Mantoux) পরীক্ষার জন্য টিউবারকুলিন সিরিঞ্জে ১ মি.লি, আয়তনকে ৫০ ভাগে ভাগ করা হয়।
এর ১ ভাগের মাপ হল ০.০২ মিলি।
ফাপা ছুঁচের বিভেল লম্বা-খাটো, স্যাফট লম্বা-খাটো সরু মােটা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকারের হয়।
রােগীর বয়স, শরীরের কোন অংশে কি কাজে ঢােকানো হবে এবং ওষুধের উপাদান প্রভৃতির ভিত্তিতে ছুঁচের বৈশিষ্ট্য
নির্ধারণ করতে হয়।
নিচের সারণীতে বিষয়টার বর্ণনা দিলাম -
কোথায় ঢােকানাে হবে? কতটা মােটা / সরু (গেজ) স্যাফটের দৈর্ঘ্য (মি.মি.) বিভেলের দৈর্ঘ্য 
-চামড়ার মধ্যে
28-30
 10-16 খুব ছােটো
-চামড়ার নিচে  25-30  16-25 খুব ছােটো
-মাংসপেশিতে  22-24 25-38   ছােটো
-শিরার মধ্যে
ছুঁচ ঢােকানোের স্থান : -
(ক) চামড়ার মধ্যে—কজি থেকে ৮ ইঞ্চি উপরে পুরােবাহু (forarm) -র ভিতরের দিকে (inner aspect); বুকে ; পিঠে অংসফলক (scapula) এর নিচে এবং উরুর পাশের বাইরের দিকে (vastus externus)
(খ) চামড়ার নিচে- ক-তে বলা সমস্ত স্থান এবং নাভি থেকে ১ ইঞ্চি দূরে পেটের দেওয়ালে।
(গ) পেশির মধ্যে - কাঁধ ও বাহুর সংযােগস্থল থেকে ২-৩ ইঞ্চি দূরে বাহুতে (deltoid muscle)। পাছাতে (buttock gluteal muscle) উর্বস্থি (femur) ও কোমরের হাড়ের সংযােগস্থলে আড়াআড়ি (মাটির সমান্তরালে) একটা দাগ টানতে হবে মনে মনে। এবার প্রতি পাছাকে সমান দু'ভাগে ভাগ করার জন্য উপর নিচে একটা করে দাগ টানতে হবে মনে মনে। এরফলে প্রতিটা পাছা চারভাগে বিভক্ত হবে। প্রতি পাছার উপরের বাইরের দিকের চতুর্থাংশে (upper and outer quadrant) অনুভূমিক দাগ থেকে ২ ইঞ্চির বেশি উপরে নয় এবং উল্লম্ব দাগ থেকে সামান্য দূরের স্থানে ছুঁচ ঢােকাতে হবে। মনে রাখতে হবে ১ বছরের কম বয়সী যে সমস্ত শিশু হাঁটতে শিখছে তাদের পাছাতে ইঞ্জেকশন দেওয়া যাবে না।।
(ঘ) শিরার মধ্যে—হাতের তালুর উল্টোপিঠ (back of the palm/dorsum of the hand), fie COCA
কনুই পর্যন্ত, গুল্ফের (ankle) উপরিভাগে জংঘাষ্ঠি।
(tibia)-র উপরে ভিতরের পাশে, পায়ের বুড়াে আঙুলের পিছনের হাড়ের উপর-ভিতর পাশে (internal sapheneous vein above and in front of internal malleolus), কানের নিচে গলার পাশে (external jugular vein), মাথার উপর-সামনের দিকে (superior longitudint venus sinus), কুঁচকি (groin)-তে (femorul vein) ইত্যাদি অংশের শিরা পছন্দ করতে হয়।
এক্সটারনাল জু গুলার ও সুপিরিয়র লংগিটিউডিনাল ভেনাস সাইনাস শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাজনক।
শিরা নির্বাচনের সময় সরু থেকে ক্রমশ মােটার দিকে যেতে হবে।
দুটো শিরার সংযােগস্থল (Y-junction) সবচেয়ে উপযুক্ত।
প্রস্তুতি/ পদ্ধতি :- চিকিৎসকের নির্দেশপত্র (prescription) নির্ভুলভাবে পড়তে পারা চাই।
নির্দেশপত্রে লেখা নাম এবং ইঞ্জেকশন গ্রহীতা এক ও অভিন্ন এটা যাচাই করে নিশ্চিত হতে হবে।
ওষুধটা প্রথমবার প্রয়ােগের পূর্বে এলার্জি পরীক্ষার প্রয়ােজনীয়তা আছে কিনা ভাবতে হবে।
এলার্জি পরীক্ষা (skin test)র পর প্রতিক্রিয়া (মৃদু / তীব্র) হলে তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকলে তবেই এ পরীক্ষার ঝুঁকি নেওয়া উচিত।
সবচেয়ে ভালাে পরামর্শদাতা (চিকিৎসক) skin test করে প্রথমবার ইঞ্জেকশন দিয়ে দিলে।
সম্ভব হলে বয়স ও ওজনের সাথে ওষুধটার মাত্রা মানানসই কিনা এবং যতটা দেওয়া দরকার ঠিক ততটাই দেওয়া হচ্ছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
ওষুধ পাত্রে অথবা প্যাকেটে অথবা পৃথকভাবে দেওয়া নির্দেশাবলী মনােযােগসহ পড়ে ফেলা চাই।
ওষুধপাত্রে দেওয়া প্রস্তুতির তারিখ এবং বাতিলের তারিখ দেখে নিতে হবে।
গ্রহীতার বয়স ও স্বাস্থ্য বিচার করে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে।
এবার হাত ধােয়ার পালা।
ইঞ্জেকশনদাতা দু’হাতের তালু ও পিঠে ভালােভাবে সাবান লাগিয়ে নেবেন।
তারপর দু’হাতের পাতা, আঙুলের ফাঁকে আঙুল, এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের পিঠ, দু’হাতের আঙুল হুকের মতাে বাঁকিয়ে পরস্পরের সঙ্গে লাগিয়ে, এক হাতের মুঠোতে অন্য হাতের বুড়াে আঙুল, এক হাতের।
আঙুলের ডগা অন্য হাতের তালুতে বুলিয়ে ঘষে ঘষে হাত ধুতে হবে—ইঞ্জেকশন দেবার আগে ও পরে।
ধােয়ার পর হাত দুটো উপরের দিকে তুলে রাখতে হবে যাতে পুরােবাহু ও কজির অংশের (অপরিষ্কার) জল আঙুলের দিকে না যেতে পারে।
এভাবেই দু’হাত শুকনাে করতে হবে বাতাসে।
শুকনাে কাপড়ে হাত মােঝা চলবে না।
এবার পলিথিনের প্যাকেট কেটে সিরিঞ্জ বের করতে হবে।
কাঁচচের ঢাকনা খুলে না ছুঁয়ে দেখে নিতে হবে বিভেলে কোনাে ত্রুটি আছে কিনা।
ঠিক থাকলে ছুঁচের ঢাকনা লাগিয়ে ছুঁচকে নজল থেকে খুলে নিতে।
এবার দু'হাত বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে (পাক / মােচড় দিয়ে) সিরিঞ্জের সাথে ছুঁচকে ভালােভাবে এঁটে নিতে হবে।
সােজাসুজি ঠেলা দিয়ে লাগালে নজল ও নিডিল হাবের সংযােগস্থল থেকে ওষুধ বের হতে পারে পিস্টনে চাপ দেওয়ার সময় অথবা বাতাস ঢুকতে পারে পিস্টন টানার সময়।
ছুঁচকে এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে IV-এর ক্ষেত্রে বিভেল ও ব্যারেলের অংশঙ্কিত দিক পরস্পর বিপরীতে থাকে এবং অপরাপর ক্ষেত্রে একই দিকে থাকে।
এবার প্লাঞ্জারকে দু-একবার টেনে ঠেলে দেখে নিতে হবে প্লাঞ্জার ঠিকমতাে কাজকরছে কিনা।
তারপর অ্যাপুল কাটতে হবে অথবা ভায়ালের রৰার ঢাকনার উপরের ধাতুর আবরণ সরাতে হবে।
রেকটিফায়েড স্পিরিট (৯০ শতাংশ এলকোহল) দিয়ে ভায়ালের ঢাকনা মুছে নিতে হবে।
অ্যাপুল হলে তা থেকে সাবধানে ওযুধ টানতে হবে যাতে অ্যালের গায়ে বিভেলের ধাক্কা না লাগে এবং অ্যাম্বুলের বাইরের গায়ে ছুঁচ না ঠেকে যায়।
ভায়ালে ওঁড়াে ওষুধ থাকলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জীবাণুমুক্ত জল ভরে ছুঁচ না বের করে ভায়ালকে উপর-নিচে (এক-দুই, এক-দুই) চারবার হাল্কা ঝাকুনি দিতে হবে।
এবার ভায়ালকে উল্টে নিতে হবে যাতে পিস্টন নিচে এবং ভায়ালের তলা উপর দিকে থাকে।
পিস্টন টানার আগে দেখে নিতে হবে বিভেল যেন তরলের উপরতলের নিচে থাকে।
যে ভায়ালে তরল আছে তাতে ছুঁচ ঢােকানাের আগে ওযুধের সমপরিমাণ বাতাস সিরিঞ্জে টেনে নিতে হবে।
তারপর ভায়াল উপরের দিকে রেখে ওই বাতাস ভায়ালে ঢুকিয়ে পিস্টন ছেড়ে দিলেই ব্যারেলে ওষুধ এসে যাবে।
না এলে পিস্টন টেনে ব্যারেলে ওষুধ ভরতে হবে।
এবার ভায়াল থেকে ছুঁচ বের করে বিভেল উপরের দিকে রেখে ব্যারেলে আঙুলের টোকা দিয়ে বুদবুদগুলােকে এক জায়গায় করতে হবে।
অসুবিধা হলে একটু বাতাস টেনে নিলে কাজটা সহজ হবে।
এবার দু’হাত পরস্পরের সঙ্গে ঠেকিয়ে স্থির করে ধীরে ধীরে পিস্টনে চাপ দিয়ে ছুঁচের ভিতর দিয়ে বাতাস বের করে দিতে হবে।
এ কাজের সময় হাত দুটো আলাদা থাকলে পিস্টনে যে চাপ দেওয়া হবে তার উপর কোনাে নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
ফলে বাতাসের সাথে কিছুটা বা অনেকটা ওষুধ বাইরে পড়ে যাবার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে।
এবার স্পিরিট ভেজানাে তুলাে দিয়ে শরীরের নির্বাচিত অংশটি মুছে পরিষ্কার করে স্পিরিট শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অন্যথায় ছুঁচের সাথে স্পিরিট ভিতরে ঢুকে প্রদাহ সৃষ্টি করবে।
ইন্ট্রাডামালের ক্ষেত্রে লােমবিহীন স্থান নির্বাচন করে চামড়ার প্রায় সমান্তরালভাবে ঢুকিয়ে ছুঁচকে খানিকটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ওষুধ খুব ধীরে ধীরে ঢােকাতে হবে।
ঠিকভাবে চামড়ার মধ্যবর্তী স্থানে ছুঁচ ঢােকানাে হলে ওষুধ ঢােকানাের সময় অবশ্যই একটা বাধার সম্মুখীন হতে হবে এবং ওষুধ ঢােকানাের পর আমবাতের (urticaria) মতাে ছুঁচ (white weal 7 nettle - sing) হবে।
IM এর ক্ষেত্রে এক হাতে সিরিঞ্জ এমনভাবে ধরতে হবে যাতে নজলের নিচে তর্জনি, ব্যারেলের উপর বুড়াে আঙুল এবং নিচে বাকি তিন আঙুল থাকে।
খালি হাতের আঙুলের সাহায্যে স্থানটাকে টানটান করে বিভেলকে উপরের দিকে রেখে দ্রুত এক ধাক্কায় ৯০ ডিগ্রি কোণে পেশিতে ঢােকাতে হবে।
পিস্টন টেনে দেখতে হবে রক্ত আসছে কি না।
না এলে ধীরে ধীরে ওষুধ ঢােকাতে হবে।
আর রক্ত হলে ছুঁচ একটু টেনে (বাইরের দিকে) এনে আবার পিস্টন টেনে দেখতে হবে।
এবারও এলে ছুঁচ বের করে নিয়ে অন্য স্থানে ঢােকাতে হবে।
যে তুলাে দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করা হয়েছে তার উল্টো দিক ছুঁচ ও চামড়ার সংযােগস্থলে চেপে দ্রুত ছুঁচ বের করে নিতে হবে।
যেখানে ওষুধ ঢােকানাে হল সেখান থেকে চামড়া পর্যন্ত ছুঁচ ঢােকানাের পথে ওষুধের রেখা যাতে না থাকে এবং যে ওষুধ প্রদাহ সৃষ্টি করে সেক্ষেত্রে সিরিঞ্জে ওষুধ ভরার সময় দুএক বুদবুদ বাতাসও ভরে নিতে হবে।
আঙুলের টোকায় বুদবুদণ্ডলােকে পিস্টনের দিকে জমা করতে হবে বিভেলকে মাটি বা মেঝের দিকে রেখে।
এবার পিস্টনে চাপ দিয়ে ছুঁচের ভিতরে ফাঁপা জায়গার বাতাস বের করে দিতে হবে।
ওষুধ ঢােকানাের পর ওই বাতাস শরীরে ঢুকিয়ে দিলে সম্ভাব্য প্রদাহ এড়ানাে যাবে।
সায়াটিক নার্ভ (sciatic nerve) এবং অধিকতর বড় রক্তবাহ (larger blood vessels) ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকা থাকায় পাছার মাংসপেশি (gluteal muscle,buttock) এড়িয়ে চলা উচিত।
IM ইঞ্জেকশনের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান উরুর (High) বাইরের দিকের পাশের পেশি (vastus externus)।
প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ পেশিতে ৫০০ সি.সি. পর্যন্ত তরল একবারে দেওয়া যায়।
এ পেশির তিনটে পৃথক স্থানে অর্থাৎ দু’দিকে মােট ৬টা পৃথক স্থানে ইঞ্জেকশন দেওয়া যায় একই জায়গায় ছুঁচ ঢােকানাের সম্ভাবনা এড়িয়ে।
তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবার মতাে গুরুত্বপূর্ণ কোনাে অংশ এখানে থাকে না।
তুলনামূলক কম পরিমাণ ওষুধের ক্ষেত্রে বাহুর পেশি (deltoid) উপযুক্ত জায়গা।
IV-এর ক্ষেত্রে শিরার যে স্থান ছুঁচ ঢােকানাের জন্য নির্দিষ্ট হবে তার কিছুটা উপরে বাঁধন (tourniquet) দিতে হবে।
হাতের ক্ষেত্রে হাত ঝুলিয়ে রেখে বাঁধন দেবার পর হাতের মুঠো কয়েকবার খুললে এবং বন্ধ করলে শিরা ফুলে উঠবে।
যে বিন্দুতে শিরাকে ফুটো করা হবে তার থেকে ৩-৪ মি.মি. দূরে প্রথমে চামড়া ফুটো করতে হবে বিভেলকে উপরের দিকে রেখে যাতে শিরার ফুটো ও চামড়ার ফুটো উপর নিচে উল্লম্ব রেখায় না থাকে।
খালি হাতের তর্জনি ও বুড়াে আঙুলের সাহায্যে শিরাকে স্থির রেখে ছুঁচ ঢােকাতে হবে।
এ কাজে সফল হলে ছুঁচের হাবে রক্ত আসবে।
এবার সিরিঞ্জকে একপাক ঘােরাতে হবে যাতে বিভেলের মুখ নিচের দিকে থাকে।
এ অবস্থায় শিরার সমান্তরালভাবে শিরার ফঁপা অংশ দিয়ে ছুঁচকে আরাে খানিকটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
খালি হাতের তর্জনি দিয়ে নজল ও হাবের সংযােগস্থল এবং বুড়াে আঙুল দিয়ে ব্যারেল চেপে ধরে প্লাঞ্জার টানতে বা ঠেলতে হবে।
উপরের বাঁধন খুলতে হবে যথাক্রমে রক্ত নেবার পর এবং ওষুধ দেবার পূর্বে।
স্পিরিটে ভেজানাে তুলাের বল ছুঁচ ও চামড়ার সংযােগস্থলে চেপে ছুঁচ বের করে নিতে হবে এবং তুলাের বলটা ৩-৪ মিনিট চেপে রাখার কথা রােগীকে অথবা রােগীর সাথীকে বলতে হবে।
শিরাতে ছুঁচ ঢােকানাের পর রােগীর নড়াচড়ায় কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীর অসাবধানতায় বিপরীত দিকের দেওয়াল ভেদ করে অথবা শিরা নড়ে গিয়ে বিভেল শিরা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।
ফলে পিস্টন টানলেও রক্ত আসবে না।
এ অবস্থায় কি ভুল হয়েছে সেটা আন্দাজ করে ছুঁচকে না বের করে সামনে বা পিছনে শিরার মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
সাফল্য পেলে ছুঁচ আরাে কয়েক মি.মি. এগিয়ে নিয়ে রক্ত সংগ্রহ করতে হবে।
ওষুধ দেবার ক্ষেত্রে শিরা থেকে ছুঁচ বের হলে পিস্টন ঠেলা মাত্র জায়গাটা ফুলে উঠবে।
তখন পিস্টন টেনে ওষুধকে পুনরায় সিরিঞ্জে ফিরিয়ে নিতে হবে।
ছুঁচকে একই স্থানে রেখে সিরিঞ্জকে বিযুক্ত করতে হবে।
অন্য সিরিঞ্জে সামান্য নর্মাল স্যালাইন (NS) অথবা জীবাণুমুক্ত জল নিয়ে ছুঁচে লাগিয়ে ঐ স্থানে ঢােকাতে হবে।
এতে ওযুধ তরলিকৃত হবে এবং টিস্যুক্ষত এড়ানাে যাবে।
এরপর ছুঁচ বের করে অন্যখানে চেষ্টা করতে হবে।
সব চেয়ে ভালাে দেখা যাচ্ছে এমন শিরা নির্বাচন ভুল।
যে শিরা দেখা যাচ্ছে না কিন্তু সহজেই ছুঁয়ে বােঝা যাচ্ছে সেটাই সব চেয়ে ভালাে।
কারণ এটা চামড়ার নিচের চর্বিত্তর দিয়ে ঘেরা থাকে।
ফলে ফুটো (veinepuncture) করার সময় ছুঁচের ঠেলায় শিরা কম নড়াচড়া করে এবং সহজেই ছুঁচকে ভিতরে ঢােকানাে যায়।
বয়স্কদের যে সমস্ত বড়াে বড়াে শিরা ভালাে দেখা যাচ্ছে সেগুলাে ফুটো করা ভয়ঙ্কর ব্যাপার।
কনুইয়ের তলায় একটা ভাজ করা তােয়ালে দিলে উল্টো দিক ভালােভাবে প্রসারিত হয়।
অনভিজ্ঞদের এই ব্যবস্থা অবলম্বন খুবই সহায়ক।
ইঞ্জেকশন দেবার পূর্বের প্রস্তুতি গ্রহীতার চোখের আড়ালে করাই বাঞ্ছনীয়।
কারণ প্রস্তুতি পর্ব দেখলে গ্রহীতার দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে।
তবে প্রস্তুতি পর্ব স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হচ্ছে কিনা এটা কেউ দেখতে চাইলে আলাদা কথা।
অধিকাংশ মানুষ যন্ত্রণার ভয়ে ইঞ্জেকশন নিতে চান না।
এঁদের আশ্বস্ত করতে হবে, মিষ্টি কথায় বােঝাতে হবে, প্রয়ােজনে ধমকও দিতে হতে পারে।
কেউ পুরাে ছুঁচ না ঢােকানাে বা একটুখানি ঢােকানাের অনুরােধ জানাতে পারেন।
এঁদের অনুরােধে সায় দিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে যে ছুঁচের সবটা ঢােকানাে হবে না।
যদিও কাজের বেলায় এ প্রতিশ্রুতি ভুলে যেতে যেন ভুল না হয়।
Reference: 1. Pye's Surgical Handicraft
2. Text Book of Veneral diseases &
Treponematoses - R.R. Wilcox
3. Venereal Diseases - E.T.Burke.
4. Pocket Book of Hospital care for children- WHO

5. ওষুধবিযুধ ও চিকিৎসার সরঞ্জাম - CDMU


No comments

Powered by Blogger.