সহস্রাব্দের লক্ষ্য - আরেক খুড়াের কল? II ২০০০ সালে ১৮৯ রাষ্ট্রের নেতারা রাষ্ট্রসংঘের ডাকা একসভায় অঙ্গীকার করেন। - suexpress

Header Ads

সহস্রাব্দের লক্ষ্য - আরেক খুড়াের কল? II ২০০০ সালে ১৮৯ রাষ্ট্রের নেতারা রাষ্ট্রসংঘের ডাকা একসভায় অঙ্গীকার করেন।



সহস্রাব্দের লক্ষ্য - আরেক খুড়াের কল?

যিশু খৃস্টের জন্মের পর থেকে ২০০০ বছর অর্থাৎ ২ সহস্রাব্দ পার হয়েছে। ২০০০ সালে ১৮৯ রাষ্ট্রের নেতারা রাষ্ট্রসংঘের ডাকা একসভায় অঙ্গীকার করেন। যে ২০১৫ সালের (অর্থাৎ ১৫ বছরের) মধ্যে ঃ
১। পৃথিবী থেকে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করা হবে,
২। নিরক্ষরতা দূর করে পৃথিবীর সব মানুষকে শিক্ষিত করে তােলা হবে,
৩। পুরুষ ও মহিলার মধ্যে লিঙ্গ-বৈষম্য দূর করা
৪। শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানাে হবে,
৫। প্রসূতিদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানাে এবং প্রসবজনিত কারণে মাতৃ মৃত্যুহার তিনের চার ভাগ কমিয়ে আনা হবে, ।
৬।এইচ.আই.ভি./এডস, টি.বি., ম্যালেরিয়া জাতীয় সংক্রামক রােগের প্রকোপ কমিয়ে আনা হবে,
৭। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে,
৮। দুনিয়াজুড়ে অংশীদারিত্ব তৈরি করতে হবে। ওই লক্ষ্যমাত্রাগুলাে সহস্রাব্দের লক্ষ্য (Millenium Development Goal) হিসাবে দুনিয়াজুড়ে প্রচার পেয়েছে। দশ বছর পর এখন আবার হৈচৈ শুরু হয়েছে। অঙ্গীকার করার সাথে সাথে লক্ষ্যমাত্রাগুলাে ব্যাখ্যা করে, তার কতটা ও কীভাবে পূরণ করা হবে সে বিষয়ে ওই দলিলে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। ওই আটটা লক্ষমাত্রাকে ২১টা পরিমাপযােগ্য লক্ষ্যে ভাগ করা হয়েছে যাদের আবার ৬৮টা মাপক (ইন্ডিকেটার) দিয়ে মাপা সম্ভব হবে।

প্রথম লক্ষমাত্রার ক্ষেত্রে ঠিক করা হয়েছে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য সম্পূর্ণ করা যাবে না, কেবল যারা দৈনিক ১ ডলারের (69.39 টাকার) কম আয় করেন ১৫ বছরের মধ্যে তাদের সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে ফেলা হবে। কিন্তু যাদের আয় ১ ডলারের বেশি অথচ ২ ডলারের কম অর্থাৎ তারাও গরিব কিন্তু তারা ওই লক্ষ্যমাত্রার আওতার বাইরে থেকে গেছেন। ওই ঘােষণায় গরিব ও বড়ােলােকের মধ্যে ফারাক কমিয়ে আনা হবে বলে অঙ্গীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে যুবক ও মহিলাসমেত সকলের জন্য সুন্দর ও প্রকৃত উৎপাদনশীল কাজের ব্যবস্থা করা হবে। যে সব মানুষ ক্ষুধার্ত থাকতে বাধ্য হন তাদের সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে ফেলা হবে। রাষ্ট্র সংঘের ওই সভায় আরাে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে সহস্রাব্দের লক্ষ (MilleniumDevelopment Goal) অর্জনের জন্য অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলাে প্রতি বছর তাদের জাতীয় আয়ের ০.৭ শতাংশ রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ তহবিলে জমা করবে গরিবদেশগুলােকে দেবার জন্য। দশ বছর পর জানা যাচ্ছে অনেক দেশই তাদের প্রতিশ্রুতি মতাে অর্থ তহবিলে জমা করেনি। ওই ঘােষণার পর দশ বছর পার হতে চলেছে। তাই শুরু হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হিসাব নিকাশ। বিভিন্ন সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা যায়।

# প্রথম লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি হলাে :

> পৃথিবীর গরিব লােকেদের ৪ ভাগের ১ ভাগ আছে ভারতে।
> ভারতের ২২ থেকে ২৩ কোটি মানুষের দৈনিক আয় ১ ডলার অর্থাৎ (69.39 টাকার) কম। ১ ১৫ শতাংশ ভারতবাসীর গড় পরমায়ু ৪০ বছর।
> ভারতের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ গরিব। মহিলাদের মধ্যে অর্থেক গরিব।



(সুত্র : UNDP রিপাের্ট)। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (FAO)-র হিসাব অনুযায়ী ২০১০ সালে ।
> ভারতে ২৩ কোটি ৭৭ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষ আছেন।
> চিন দেশে এই সংখ্যাটা হলাে ১৩ কোটি ৪ লক্ষ।।
> সারা পৃথিবীর ৮৪ কোটি ৭৫ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে ২৮ শতাংশ হলাে ভারতীয়।

> ভারতে ২১ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছেন, চিনদেশে এটা হলাে ১০ শতাংশ।
> এক দল বিজ্ঞ ব্যক্তি হিসাব করেছেন পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য সম্পূর্ণ দূর করতে ৭০ বছর সময় লাগবে।

# দ্বিতীয় লক্ষ্য অর্থাৎ পৃথিবী থেকে নিরক্ষরতা দূর করেসক লের অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে অগ্রগতি মােটামুটি সন্তোষজনক। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী ২০০৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই ৯০ শতাংশ শিশুকে স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার ১৮ লক্ষ শিশু এখনও স্কুলের গভীর বাইরে রয়ে গেছে।
# আমাদের দেশে সরকারের তরফ থেকে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে লিঙ্গ-বৈষম্য দূর করার কিছু প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেলেও দেশের অধিকাংশ রাজ্যে সামাজিক স্তরে লিঙ্গ-বৈষম্য এখনাে প্রকট। অধিকাংশ মুসলিম প্রধান দেশে মহিলাদের প্রতি বৈষম্য এখনাে মধ্যযুগের স্তরে রয়ে গেছে। ধারণা করা যায় এই বৈষম্য দূর হতে এখনাে বহু দিন সময় লাগবে। এ ব্যাপারে সহস্রাব্দের লক্ষ্য (Millenium Development Goal) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিছুতেই অর্জন করা সম্ভব হবে না।
# প্রসূতিদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানাে এবং প্রসবজনিত কারণে মাতৃমৃত্যুর হার তিনের চার ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে যে তথ্য জানা গেছে তা হলাে :
• প্রসবজনিত কারণে সারা পৃথিবীতে ৫ লক্ষ ৩৬ হাজার মহিলার মৃত্যু হয়, যার মধ্যে ১ লক্ষ ১৭ হাজার হলেন ভারতবাসী।
• ভারতে প্রতি ১ লক্ষ শিশুর জন্মের সময় ৫৪০ জন মায়ের মৃত্যু হয়। এশিয়ার অন্য তিনটে দেশ যেমন মালয়েশিয়ায় মাতৃ-মৃত্যুহার ৪১, চিন দেশে ৫৬ আর শ্রীলঙ্কায় ৯২। এই পরিস্থিতির কারণ বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা অধিকাংশ মেয়ের থাকে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া। গর্ভকালীন পরিচর্যা (antenatal care)-র সুযােগ পেলেও তাদের জানিয়েছেন যে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের ব্যয়বরাদ্দ, গর্ভকালীন পরিচর্যার (antenatal care) সুযােগ এবং প্রশিক্ষিত কর্মীর হাতে প্ৰসৰ হওয়া-না হওয়া মাতৃমৃত্যুহারের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ ভাবে জড়িত।

• ভারত সরকার স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় আয়ের মাত্র ১ শতাংশ অর্থাৎ মাথাপিছু প্রতি বছর কমবেশি ১০০ টাকা বরাদ করে। মালয়েশিয়ায় এটা হলাে কমবেশি ৩৫০০ টাকা, চিনদেশে কমবেশি ১০০০ টাকা আর শ্রীলঙ্কায় কমবেশি ৭৫০ টাকা।
• এশিয়ার ওই তিনটে দেশে ৯৭ থেকে ১০০ শতাংশ। প্রসব হয় প্রশিক্ষিত চিকিৎসাকর্মীর হাতে। ভারতের ক্ষেত্রে তা ৫০ শতাংশেরও কম।
• মাতৃ-মৃত্যুহার ও শিশু-মৃত্যুহার কমানাের জন্য ভারত সরকার জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে জননী সুরক্ষা যােজনা চালু করেছে। এই প্রকল্পে হাসপাতালে প্রসব করানাের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে আশানুরূপ ফল না পাওয়ার কারণ প্রসব করাতে হাসপাতালে আসার আগে অনেকেই কোনাে গর্ভকালীন পরিচর্যা (antenatal care)-র সুযােগ পান না। চার। ভাগের এক ভাগ প্রসূতির ওই পরিচর্যা পাওয়ার সুযোেগ হয় না। তিন ভাগের এক ভাগ প্রসূতির ভাগ্যে টিটেনাস টয়েড ইঞ্জেকশনের একটা মাত্রাও জোটে না।
দ্বিতীয় কারণ হলাে পরিকাঠামাের ঘাটতি। ২০০৬ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ২০০১ সালের জনসংখ্যা অনুযায়ী দেশে ২০,৯০৩ টা সাবসেন্টার, ৪৮০৩ টা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২,৬৩৩ টা কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘাটতি আছে। দেশের প্রতি ৬০০০ জনের জন্য ১টা হাসপাতালের শয্যা আছে। এছাড়া আছে চিরাচরিত লিঙ্গ-বৈষম্যের ব্যাপার। আমাদের দেশে শিশু অবস্থা থেকেই অধিকাংশ মেয়ে পুষ্টি, আদরযত্ন, অসুখ হলে চিকিৎসার সুযােগ ছেলেদের তুলনায় কম পেয়ে থাকে ফলে তাদের স্বাস্থ্য এমনিতেই খারাপ থাকে। অধিকাংশ মেয়ের থাকে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া। গর্ভকালীন পরিচর্যা (antenatal care)-র সুযােগ পেলেও তাদের।ওই ঘাটতি পুরােপুরি দূর করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া শরীরের গঠন সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই অধিকাংশ মেয়ে। (বিশেষত গ্রামাঞ্চলে) গর্ভধারণ করেন যেটা প্রসবজনিত মাতৃ-মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার একটা বড়াে কারণ।
• সংক্রামক রােগের মধ্যে টি.বি. রােগের ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হলেও ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর এবং ফাইলেরিয়া নির্মূল করার বিষয়ে লক্ষমাত্রা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্জন করা গেছে। [এইচ আই. ভি.] এডস-এর প্রকোপ কমানাের লক্ষ্যমাত্রায় পৌছানাে যায় নি। ডেঙ্গুজ্বর নির্মূল করার বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশ অর্জন করা গেছে।
• ৭ম লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের দেশের অবস্থা সম্বন্ধে অনেকেরই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। স্পঞ্জ আয়রন কারখানাসহ অন্যান্য পরিবেশদূষণকারী শিল্পের কারণে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে অল্পবিস্তর সকলেরই জানা আছে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা বা মদতে শিল্প গড়ার নামে ব্যাপক বনাঞ্চল ও পাহাড় ধ্বংস করে ওই সব অঞ্চলের অধিবাসী, বিশেষ করে আদিবাসীদের বাস্তু ও জীবিকাচ্যুত করা চলছে। বহু মানুষের জন্য বাসস্থান, পরিভ্রুত জলের জোগান ও মলমূত্র নিষ্কাশনের স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা করা। যায় নি।
• ৮ম লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ দুনিয়াজুড়ে অংশীদারিত্ব তৈরির পরিকল্পনার বিষয়টা খুবই অভিনব। এতে বড়ােলােক ও গরিবদেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। এটা যেন এক ধরনের বাঘ। আর ছাগলের অথবা বলা যেতে পারে শােষক ও শােষিতের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরির চেষ্টা। ধনী দেশগুলাে যতই গরিব দেশের বন্ধু সাজার চেষ্টা করুক, আসলে এটা কিন্তু লােক দেখানাে ব্যাপার কারণ দাতা। আর গ্রহীতা অথবা খাদ্য আর খাদকের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার ঘটনা সােনার পাথরবাটির মতাে ব্যাপার।
এক দিকে গরিবের বা গরিব দেশের বন্ধু সাজার জন্য সহস্রাব্দের লক্ষ্য (Millenium Development Goal) ঘােষণা করছে অন্য দিকে বড়ােলােক দেশগুলাে সরাসরি অথবা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) অসম চুক্তির সুযােগ নিয়ে ওই সব দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলাে গরিব দেশগুলাের জল-জঙ্গল-জমির ওপর অধিকার কায়েম করে, ওই সব দেশকে আরও বেশি শােষণ করে আরও গরিব, নিঃস্ব করে ফেলেছে। বলা বাহুল্য এই ব্যাপারে অবশ্যই তারা গরিব দেশগুলাের সরকার আর পুঁজিপতিদের সহযােগিতা পাচ্ছে। সহস্রাব্দের লক্ষ্য মনে হয় একটাই তা হলাে চাল সমাজ ব্যবস্থাকে বজায় রেখে, দারিদ্র্যকে সহনীয় করে তােলা। লােককে দেখানাে যে গরিব মানুষের ভালাের জন্য বড়ােলােক দেশগুলাের খুবই দুশ্চিন্তা।
পাঠক-পাঠিকাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ১৯৭৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে রাশিয়ার আলমা আটা শহরে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের প্রতিনিধিরা মিলে ২০০০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য লাভের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করে এক ঘােষণাপত্রে সই করে ছিলেন। সকলেই জানেন ওই সময়সীমার মধ্যে ওই ঘােষণা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয় নি। সবার জন্য স্বাস্থ্য লাভের ঘােষণাটাই ছিলাে অবাস্তব। কারণ সকলের জন্য স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করতে হলে সকলের জন্য খাদ্যের যােগান সুনিশ্চিত করতে হবে, তার জন্য চাই সকলের কাজের ব্যবস্থা, বাসস্থানের, পরিসুত জলের যােগান, মলমূত্রসহ সব ধরনের বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, সকলের জন্য শিক্ষা, অসুখ যাতে না হয় এবং অসুখ হলে সকলের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্য মানে কেবল অসুখ না হওয়া নয়, শরীর ও মনের এক সুষম অবস্থার নাম হলাে স্বাস্থ্য। না খেয়ে বা আধপেটা খেয়ে, দূষিত জল ব্যবহার করে, বস্তি, ঝুপনি, কুড়ে ঘর ইত্যাদি অস্বাস্থ্যকর বাসস্থানে ও পরিবেশ থাকতে বাধ্য হলে কারু পক্ষে স্বাস্থ্যলাভ করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্র নেতারা কেউ এটা বুঝতে বা জানতাে না তা বিশ্বাস করা কঠিন। তাই তারা কেউই এখন আর ওই বিষয়টা নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করে । কেউই আত্মসমালােচনা করে বলে না যে সবার জন্য স্বাস্থ্য লাভের ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করাটাই ভুল হয়েছিলাে বা বাস্তবসম্মত ছিলাে না। অনেকের মতে ওই সময় সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যের দাবিতে যেচ ব্যাপক আন্দোলন শুপরু হয়েছিল তাকে ধামাচাপা দেবার জন্যই ওই অঙ্গীকার করা হয়েছিল যাতে ২০০০ সাল পর্যন্ত মানুষকে ধোঁকা দিয়েছ ‘স্বাস্থ্য লাভের আন্দোলন থেকে বিরত রাখা যায়। অনেকের সন্দেহ সহস্রাব্দের লক্ষ্য (Millenium Development Goal)-ও ওই ধরনেরই আরেকটা ব্যাপার। তার প্রমাণ পেতে কষ্ট হয় না, দশ বছরে লক্ষমাত্রা অর্জনের পরিমাণ থেকেই সেটা স্পষ্ট হয়। (সুকুমার রায়ের আবােল। তাবােল যারা পড়েছেন তারা খুঁড়াের কল সম্বন্ধে জানেন, বইতে খুড়াের কলের ছবিও দেখেছেন। বেশ মাথা খাটিয়ে চন্ডীদাসের খুঁড়াে কলটা আবিষ্কার করেছেন। যন্ত্রটা দেখতে মাছ ধরার ছিপের মতাে। বড়শির যায়গায় একটা লােভনীয় খাবার ঝােলানাে। কারুর (অবশ্যই বােকা লােকের) পিঠে চেপে কলটা কাধের সাথে বেঁধে ওই খাবার ঝুলিয়ে রাখতে হবে। খাবারের লােভে বােকা লােকটা যতাে এগিয়ে যাবে, কলের ডগায় ঝােলানাে খাবারটাও ততাে এগিয়ে যাবে। বহু চেষ্টা করলেও লােকটা কখনােই লােভনীয় খাবারের নাগাল পাবে না। এই ভাবে খুঁড়াের কলে খাবারের টোপ দিয়ে পাঁচ ঘন্টার রাস্তা দেড় ঘন্টায় পৌঁছে যাওয়া যাবে।

No comments

Powered by Blogger.