মানুষের জননতন্ত্রের গঠন ও কাজ ... ডা. দেবাশিস দাস - suexpress

Header Ads

মানুষের জননতন্ত্রের গঠন ও কাজ ... ডা. দেবাশিস দাস


মানুষের জননতন্ত্রের গঠন ও কাজ

ডা. দেবাশিস দাস

প্রত্যেক মানুষের দুটো হাত, দুটো পা, দুটো চোখ, একটা নাক, একটা মুখ। সে পুরুষ হােক কি নারী। প্রত্যেকেরই দুটো কিডনি, একটা মস্তিষ্ক, একটা হৃৎপিন্ড। কিন্তু নারী পুরুষ একটা জায়গায় মূল শারীরিক গঠনে তফাৎ হয়ে। যায় তাহলাে এদের প্রজননতন্ত্র কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। আলাদা রকমের। কিন্তু কেন? কারণ হল, প্রজননে নারী এবং পুরুষের ভূমিকা আলাদা আলাদা রকমের। আসুন দেখি কি সেই তফাৎ পুরুষ এবং স্ত্রীজননাঙ্গের গঠনে।
স্ত্রী জননতন্ত্রের গঠন : বিভিন্ন বই, পত্র পত্রিকায় প্রজননতন্ত্রের গঠন একটু জটিল করে দেখানাে থাকে। এতে অসুবিধা হয় এই যে প্রজনন তন্ত্রের মতাে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অঙ্গতন্ত্র সম্পর্কে সঠিক এবং পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয় না। আর তাই প্রজননতন্ত্রের কাজও রােগভােগ সম্পর্কেও বুঝতে বেশ অসুবিধা হয়। এখানে আমরা দেখবাে ছবি আর কথায় স্ত্রী প্রজননতন্ত্র এবং পরে পুরুষ জননতন্ত্রের গঠন ও কাজ। স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের মূলত চারটে অংশ থাকে। 
এগুলাে হল। (ক) জরায়ু-১টা, (খ) ডিম্বনালী-২টা, (গ) ডিম্বাশয়-২ টা, (ঘ) যােনি -১টা।
জরায়ু : শরীরের মধ্যরেখা বরাবর মাংশল একটা থলি হল জরায়ু। জরায়ুর মূল কাজ হল সন্তানধারণ। নারী। যখন সন্তানধারণ করেন তখন ৯ মাস ৭ দিন ভুণ জরায়র মধ্যে বড় হয়। পরিণত বয়সের মহিলাদের (১০-১৪ বছর বয়স থেকে ৪৫-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত) প্রতিমাসে একবার করে যে ঋতুস্রাব হয় তা আসলে জরায়ুর ভেতরের গা থেকে যায়।

ডিম্বনালী : জরায়ুর দু পাশে দুটো ডিম্বনালী বেরােয়। ডিম্বনালীর অপর প্রান্ত ডিম্বাশয় পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দিকটা দেখতে ঝালরের মতাে। এই ঝালরগুলাে ডিম্বাশয় থেকে ডিম বেরােনাে মাত্রই তাকে সহজে ডিম্বনালীর মধ্যে ঢুকতে সাহায্য করে। ডিম্বনালীর কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত ডিম্বাশয় থেকে বেরােনাে ডিম্বাণুকে জরায়ুর দিকে বয়ে নিয়ে যাওয়া। তবে ডিম্বনালী দিয়ে চলার মাঝপথে। ডিম্বাণুর সঙ্গে শুক্রাণু যদি মিলিত হয় তবে তা ভূণাণু বা জাইগােট তৈরি করে। লূণাণু তৈরি তাহলে ডিম্বনালীর মধ্যেই হয়। এরপর ক্রুণাণু যত বড় হতে থাকে তা গড়াতে গড়াতে জরায়ুর দিকে এগােয়। শেষ পর্যন্ত লূণাণু জরায়ুতে প্রবেশ করে এবং জরায়ুর দেওয়ালে আটকে যায়। এখানেই ঢুণ বড় হয় এরপর।।
স্ত্রী জননতন্ত্রের গঠন

স্ত্রী জননতন্ত্রের গঠন





যানি : যােনি হল নারীর সহবাসের অঙ্গ। সহবাসের সময় পুরুষের লিঙ্গ স্ত্রীর যােনিতে প্রবেশ করে। অন্তিম উত্তেজনার মুহূর্তে পুরুষের বীর্য বা ধাত স্ত্রীর যােনির অনেক উপরের দিকে জরায়ু মুখের কাছাকাছি নিক্ষিপ্ত হয়। এরপর এই বীর্যের মধ্যে উপস্থিত শুক্রাণু জরায়ু। মখ ভেদ করে জরায়ুর শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। শুক্রাণুগুলাে এত ছােট আকারের যে তাদের কাছে মাত্র ছয় থেকে দশ সেন্টিমিটার উচ্চতার জরায়ুর মধ্যকার পথ প্রায় সমুদ্রে পাড়ি দেবার সমান। এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে গিয়ে অধিকাংশ শুক্রাণুই মারা যায়। মাত্র কিছু সংখ্যক শুক্রাণু ডিম্বনালীতে প্রবেশ করে। এবার ডিম্বনালীর মধ্যে যদি আগে থেকে ডিম্বাণু এসে বসে থাকে তবে এই শুক্রাণুগুলাে তাকে নিষিক্ত করার চেষ্টা করে। একটামাত্র শুক্রাণুই পরিণত ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে ভুণাণু তৈরি করে। নিষিক্ত ডিম্বাণু হল নতুন একটা জীবনের একটামাত্র কোষ। এই একটা কোষ থেকে ভেঙে দুটো, দুটো ভেঙে চারটে, চারটে ভেঙে আটটা...

এরকমভাবে খুব দ্রুত ক্রুণাণু বড় হতে থাকে। আগেই বলেছি বড় হতে হতে ভূণাণু জরায়ুর দিকে এগােয় এবং ৫-৭ দিনের মাথায় ডিম্বনালী থেকে জরায়ুর মধ্যে এসে উপস্থিত হয়। জরায়ুর দেওয়াল ততক্ষণে ভূণকে বসতে দেবার জন্য তৈরি করেছে নিজেকে। এসময় ভূণ টুপ করে জরায়ুর ভেতরের দেওয়াল বা এন্ডােমেট্রিয়ামের মধ্যে ঢুকে থাকে। এবার ঢুণাণুর আরও বড় হবার পালা।।
আস্তে আস্তে শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলাে তৈরি হয়। পর শীরীরে ৯ মাস ৭ দিনে এই ভ্ৰণই পূর্ণগঠিত শিশুতে পরিণত হয়। প্রসবের সময় যােনিপথে এই পূর্ণগঠিত শিশু বেরিয়ে আসে। পুরুষের জননতন্ত্র! স্ত্রী জননতন্ত্র সম্পর্কে জানতে গিয়ে।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই আগ্রহ তৈরি হয়েছে পুরুষ জননতন্ত্র।
সম্পর্কে কিছু তথ্য জানার জন্য। স্ত্রীর যেমন ডিম্বাশয় থাকে দুটো, তেমনি পুরুষের জননতন্ত্রের প্রধান অংশ হল দুটো শুক্রাশয়। তবে স্ত্রীর ডিম্বাশয় যেমন তলপেটের গভীর অংশে লুকানাে থাকে পুরুষের শুক্রাশয়দুটো লিঙ্গের ঠিক পেছনে একটা পাতলা চামড়া দিয়ে ঢাকা থলির মধ্যে থাকে। এই থলির নাম শুক্রথলি। শুক্রাশয় দুটো থেকে দুটো নালী বা মার্কি কর্ড তৈরি হয়। এই নালী দুটো শুক্রথলি থেকে ওপরের দিকে উঠে পেটের মধ্যে ঢুকে যায় এবং অবশেষে। মূত্রথলির ঠিক গােড়ায় শুক্রনালীতে এসে পড়ে। শুক্রাশয়ের কাজ শুক্রাণু তৈরি করা। শুক্রনালীর মারফত তা মূত্রনালীর দিকে আসতে থাকে। শুক্রনালী যেখানে মূত্রনালীতে এসে পড়ে সেখানে সেমিনাল ভেসিকল নামক একটা থলির মধ্যে শুক্রাণু জমা হয় । থাকে। সহবাসের সময় সেমিনাল ভেসিকল-এ জমা থাকা শুক্রাণু লিঙ্গপথে বেড়িয়ে আসে।
লিঙ্গ : এটা হল পুরুষের যৌনক্রিয়ার অঙ্গ। লিঙ্গের মধ্যে থাকে মূত্রনালী, মূত্রনালীপথে একদিকে যেমন নিয়মিত মূত্রথলি থেকে প্রস্রাব বাইরে আসে তেমন সহবাসের সময় শুক্রাণুও নির্গত হয়। সুতরাং পুরুষ জননতন্ত্রের মূল চারটে অংশ হল (ক) শুক্রাশয় (খ) শুক্রনালী, (গ) সেমিনাল ভেসিকল এবং (ঘ) লিঙ্গ।।
পুরুষের যৌনক্রিয়ার অঙ্গ
পুরুষের যৌনক্রিয়ার অঙ্গ

No comments

Powered by Blogger.